রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৩:৫৫ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
স্বেচ্ছাসেবক লীগের র‌্যালি থেকে ফেরার পথে ছুরিকাঘাতে কিশোর নিহত দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চরম তাপপ্রবাহ আসন্ন বিপদের ইঙ্গিত দ্বিতীয় ধাপে কোটিপতি প্রার্থী বেড়েছে ৩ গুণ, ঋণগ্রস্ত এক-চতুর্থাংশ: টিআইবি সাড়ে ৪ কোটি টাকার স্বর্ণসহ গ্রেপ্তার শহীদ ২ দিনের রিমান্ডে ‘গ্লোবাল ডিসরাপ্টর্স’ তালিকায় দীপিকা, স্ত্রীর সাফল্যে উচ্ছ্বসিত রণবীর খরচ বাঁচাতে গিয়ে দেশের ক্ষতি করবেন না: প্রধানমন্ত্রী জেরুসালেম-রিয়াদের মধ্যে স্বাভাবিককরণ চুক্তির মধ্যস্থতায় সৌদি বাইডেনের সহযোগী ‘ইসরাইলকে ফিলিস্তিন থেকে বের করে দাও’ এসএমই মেলার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ইরান ২ সপ্তাহের মধ্যে পরমাণু অস্ত্র বানাতে পারবে!
আবরারকে টর্চার সেলে ডেকে নিয়েছিল নাজমুস সাদাত

আবরারকে টর্চার সেলে ডেকে নিয়েছিল নাজমুস সাদাত

স্বদেশ ডেস্ক:

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে টর্চার সেল ২০১১ নম্বর কক্ষে প্রথম ডেকে নেয় এ এস এম নাজমুস সাদাতসহ বেশ কয়েকজন। সিক্রেট ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে নির্দেশ পাওয়ার পরেই রাতে আবরারকে নিজ কক্ষ থেকে ডেকে করিডোর দিয়ে দোতলার সিঁড়ির দিকে নিয়ে যান সাদাত, তানিম, বিল্লাহসহ কয়েকজন। রাত দেড়টার দিকে ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে জানতে চাওয়া হয়, কিরে আবরারকে ধরছিলি? সাদাতরা উত্তর দেয়- মরে যাচ্ছে, মাইর বেশি হয়ে গেছে। এরপর ঘটনাকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে ছাত্রলীগ নেতারা আবরারকে তখন পুলিশের হাতে দেয়ার জন্য নিচে নামাতে বলে। পরে তোশকে করে কয়েকজন দোতলা ও নিচতলার সিঁড়ির মাঝামাঝি রাখে আবরারকে। এরপর আবরারের মৃত্যুর খবর পেয়েই গাঢাকা দেয় এ এস এম নাজমুস সাদাত। ঘটনার সাত দিন পর ভারতে পালানো সময় গত সোমবার রাতে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলা থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল তাকে গ্রেফতার করে। তাকে নিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার এড়াতে সাদাত দিনাজপুরের হিলি সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালানোর চেষ্টায় ছিলেন বলে জানিয়েছে তদন্তসংশ্লিষ্টরা।

এ দিকে আবরার ফাহাদকে হত্যার ঘটনায় আসামি মনিরুজ্জামান মনির আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। গতকাল ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম সরাফুজ্জামান আনছারী তার জবানবন্দী রেকর্ড করেন। এ ছাড়া আসামি শামসুল আরেফিন রাফাতকে ফের চার দিনের রিমান্ডসহ আরেক আসামি মো: আকাশ হোসেন রাফাতকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

তদন্তসংশ্লিষ্ট ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদি হাসান রবিন তাদের সিক্রেট ফেসবুক গ্রুপে আবরারকে মারার নির্দেশ দেন। নির্দেশ অনুযায়ী পরদিন রোববার সন্ধ্যায় আবরার হলে ফিরলে রাত ৭টা ৫২ মিনিটে মনিরুজ্জামান সিক্রেট মেসেঞ্জারে সবাইকে নিচে নামতে বলেন। এরপর শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর রুমে নিয়ে শিবির সংশ্লিষ্টতার স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য আবরারকে বেধড়ক পেটানো হয়। পেটানোর একপর্যায়ে মারা যান আবরার। সারারাতই সিক্রেট গ্রুপে আবরারকে নির্যাতনের বর্ণনার আপডেট দিতে থাকেন বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রসঙ্গে গত সোমবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আবরার হত্যা অনেক বিষয়ের সমষ্টি। ঘটনার মোটিভ সম্পর্কে জানতে আমাদের আরো কয়েক দিন লাগবে।

এ দিকে সিক্রেট গ্রুপের কথোপকথনে দেখা যায় গত ৫ অক্টোবর শনিবার বেলা ১২টা ৪৭ মিনিটে মেহেদি হাসান রবিন মেসেঞ্জার গ্রুপে আবরারকে ‘মেরে হল থেকে বের করে’ দেয়ার নির্দেশ দেন। ম্যাসেঞ্জারে যেসব কথোপকথন হয়েছে, সেগুলো হুবহু নিচে তুলে ধরা হলো-

মেহেদী : ১৭ এর আবরার ফাহাদ। মেরে হল থেকে বের করে দিবি দ্রুত। এর আগেও বলছিলাম। তোদের তো কোনো বিকার নেই। শিবির চেক দিতে বলছিলাম।
মনিরুজ্জামান : ওকে ভাই। মেহেদী : বাল ওকে ভাই। দুই দিন টাইম দিলাম।
মনিরুজ্জামান : ওকে ভাই।

মেহেদী : দরকার হলে ১৬-এর মিজানের সঙ্গে কথা বলিস। ও আরো কিছু ইনফো দিবে শিবির ইনভলভমেন্টের। নির্দেশ অনুযায়ী পরদিন রোববার সন্ধ্যায় আবরার ফাহাদ গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া থেকে হলে ফিরলে রাত ৭টা ৫২ মিনিটে ছাত্রলীগ নেতা মনিরুজ্জামান সিক্রেট মেসেঞ্জারে সবাইকে নিচে নামতে বলেন। রাত ৮টা ১৩ মিনিটে আবরারকে নিজ কক্ষ থেকে ডেকে করিডোর দিয়ে দোতলার সিঁড়ির দিকে নিয়ে যান সাদাত, তানিম, বিল্লাহসহ কয়েকজন।
ঘটনার রাত ১২টা ৩৮ মিনিটে সিক্রেট মেসেঞ্জার গ্রুপে অমিত সাহা জানতে চান, আবরার কী হলে আছে?
সাকিব : জী ভাই, ২০১১ তে আছে।
সামছুল : হ্যাঁ ভাই, ২০১১ তে।

রাত ১টা ২৬ মিনিটে মেহেদী মেসেঞ্জার গ্রুপে জিজ্ঞাসা করেন, তোরা আবরারকে ধরছিলি?
ইফতি : হ্যাঁ।
মেহেদী : বের করছোস নাকি?
ইফতি : কী? হল থেকে নাকি স্বীকারোক্তি?
মেহেদী : স্বীকার করলে তো বের করা উচিত।
ইফতি : মরে যাচ্ছে, মাইর বেশি হয়ে গেছে।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর থেকে সাদাত পলাতক ছিলেন। পরে গত সোমবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ডিবির একটি দল দিনাজপুরের বিরামপুর থানার কাটলা বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। নাজমুস সাদাত বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি জয়পুরহাটের কালাই থানার কালাই উত্তর পাড়ার হাফিজুর রহমানের ছেলে। গ্রেফতার এড়ানোর জন্য তিনি দিনাজপুরের হিলি বর্ডার দিয়ে ভারতে পালানোর চেষ্টা করছিলেন বলে এই কর্মকর্তা জানান।

বিরামপুর থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, আবরার হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি নাজমুস সাদাত বিরামপুরের কাঠলা সীমান্ত পথ ব্যবহার করে ভারতে পালিয়ে যাচ্ছিলেন বলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল বিরামপুর থানায় আসে। পরে বিরামপুর থানা পুলিশের সহযোগিতায় উপজেলার কাঠলা গ্রামে সাদাতের আত্মীয় রফিকুলের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর ডিবি পুলিশ দ্রুত তাকে ঢাকায় নিয়ে যায়।

মনিরের স্বীকারোক্তি, আকাশ কারাগারে : আদালত ও পুলিশ সূত্র জানায়, আসামি মনির নিজের দায় স্বীকার করে স্বেচ্ছায় আদালতে জবানবন্দী দিতে সম্মত হন। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী রেকর্ড করার জন্য আদালতে আবেদন করেন। তখন আদালত মনিরের জবানবন্দী গ্রহণ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ ছাড়া আরেক আসামি আকাশকে রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হয়। একই বিচারক আবেদন মঞ্জুর করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
দ্বিতীয় দফায় শামসুল আরেফিনের ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর : এ দিকে আবরার ফাহাদ রাব্বীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত শামসুল আরেফিন রাফাতকে দ্বিতীয় দফায় ফের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তদন্ত কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, আগের দফার পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল মঙ্গলবার রাফাতকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সাময় দ্বিতীয় দফায় সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হলে শুনানি শেষে আদালতে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে গত ৮ অক্টোবর রাজধানীর ঝিগাতলা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তাকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গত ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বুয়েটের ১৭তম ব্যাচের ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বীকে। এ ঘটনায় তার বাবা বরকত উল্লাহ বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877